শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৭ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞাপন :
কোন পণ্য বা সেবার জন্য বিজ্ঞাপন তৈরি করতে চান? আপনি যদি বিজ্ঞাপন তৈরি করতে আগ্রহী হন সুযোগ আছে জয়েন করুন।

৬ জেলা বন্যায় আক্রান্ত, ক্ষতিগ্রস্ত ১৮ লাখ মানুষ

আরমান হোসেন খানঃ
টানা বৃষ্টি এবং ভারতের ডম্বুর ও গজলডোবা বাঁধ খুলে দেয়ার ফলে বাংলাদেশে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যায় বাংলাদেশের ছয়টি জেলার প্রায় ১৮ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানিয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বলছে, গত ২০ অগাস্ট থেকে কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী এবং মৌলভীবাজার জেলায় প্রায় দুই লাখ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্রয় দেয়ার জন্য মোট এক হাজার ৩৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এছাড়া চিকিৎসা সেবা দিতে ৩০৯টি মেডিকেল টিম চালু হয়েছে বন্যা কবলিত এলাকায়।
এদিকে, উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ৭টি নদনদীর পানি বইছে বিপৎসীমার উপর দিয়ে। আকস্মিক ও দ্রুত পানি বাড়ায় হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, সিলেট, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালীসহ কয়েকটি জেলার শহর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আখাউড়া স্থলবন্দর পানিতে ডুবে যাওয়ায় কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। খাগড়াছড়ির মাইনি ও কাচালং নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ডুবে গেছে খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কের একাধিক অংশ।

পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এসব এলাকার কয়েক লাখ মানুষ। অনেকেই ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে। বন্যাকবলিত মানুষকে উদ্ধার ও নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে কাজ করছে সেনাবাহিনী। তবে এখনো ত্রাণ বিতরণ করা হয়নি বন্যাকবলিতদের মাঝে। অবশ্য তারা এই মুহূর্তে ত্রাণ নয়, উদ্ধার ও নিরাপদ আশ্রয় চাইছেন। মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। উজানের ঢলে জুলাইয়ের শুরুতেও দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছিল। এর ফলে প্লাবিত হয় অনেক গ্রাম।
বন্যা পরিস্থিতি আরো একদিন পর উন্নতির দিকে যেতে পারে বলে আভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেছেন, মৌসুমি লঘুচাপের কারণে ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের সীমান্তে বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর ফলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতি আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত একই থাকবে। তারপর থেকে কমে যেতে পারে। মোটামুটি তিন দিনের মধ্যে অনেক জায়গাতেই বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে। কেন্দ্রের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি বাড়ছে। তিনি আরো জানান, বর্তমানে সাতটি নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে।

সুনামগঞ্জের মারকুলিতে কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, মৌলভীবাজারের রেল ব্রিজে মনু নদীর পানি বিপৎসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে ও মৌলভীবাজারে ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, ধলাই নদীর পানি মৌলভীবাজারে ৪৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, হবিগঞ্জের বান্নায় খোয়াই নদীর পানি ১৯৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে ও হবিগঞ্জে ১৯০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, ফেনীর পরশুরামে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, ফেনী নদীর পানি চট্টগ্রামের রামগড়ে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে ও হালদা নদীর পানি চট্টগ্রামের নারায়ণহাটে বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী ও চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

পাউবো জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা নদনদীর পানি কমছে, অপরদিকে পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। আগামী দুদিনে এসব নদীর পানি কমতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানি বাড়ছে। আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, আগামী দুদিনে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে এসময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার প্রধান নদীসমূহের পানি কতিপয় পয়েন্টে বাড়তে পারে। এদিকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।

আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, আগামী একদিনে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে এ সময় এ অঞ্চলের মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও গোমতী ইত্যাদি নদীসমূহের পানি সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীল থাকতে পারে। একই সময়ে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলার মুহুরী ও হালদা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইতে পারে এবং নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। এছাড়া পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লা জেলার গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।

সংবাদটি শেয়ার করুন :

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত