শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৪ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞাপন :
কোন পণ্য বা সেবার জন্য বিজ্ঞাপন তৈরি করতে চান? আপনি যদি বিজ্ঞাপন তৈরি করতে আগ্রহী হন সুযোগ আছে জয়েন করুন।

তদন্তে মাঠে নেমেছে জাতিসংঘের ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দল’


রেজাউল করিম,
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশে জুলাই ও আগস্ট মাসে হতাহতের ঘটনা নিয়ে তদন্ত করবে জাতিসংঘের ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দল’। শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) থেকে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

সূত্রে বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দল বাংলাদেশে এসেছে। সব কিছু ঠিক থাকলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বা পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দল তাদের কাজ শুরু করবে।

জানা গেছে, দলটি গত ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর তদন্ত করবে। ঘটনাগুলোর কারণ (রুট কজ) পর্যালোচনা করবে এবং ন্যায়বিচার ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদি কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে সে সম্পর্কে সুপারিশ করবে।

এর আগে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের সময় বিক্ষোভকারীদের হত্যা করার বিষয়ে জাতিসংঘ তদন্ত করবে।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) জানিয়েছে, গত ১৬ জুলাই থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মোট ৮৭৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহতের সংখ্যা ৩০ হাজারেরও বেশি। নিহতদের মধ্যে ৭৭ শতাংশই মারা গেছেন গুলিবিদ্ধ হয়ে। এছাড়াও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রায় ৫০ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। আন্দোলনের সময় হতাহতের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে।

প্রতিবেদনটি তৈরির জন্য দেশের ১২টি জাতীয় দৈনিক, নিজস্ব তথ্য অনুসন্ধানী ইউনিট ও সারাদেশ থেকে স্বেচ্ছাসেবকদের পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করেছে এইচআরএসএস। গণমাধ্যম, হাসপাতাল ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে যেসব বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে এক হাজার হবে বলে ধারণা করছে সংস্থাটি।

এইচআরএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, মোট ৭৭২ জনের মৃত্যুর ধরন সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৯৯ জন বা ৭৭ শতাংশ গুলিতে নিহত হয়েছেন। ৬১ জন (৮ শতাংশ) অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছে। ৮৫ জনকে (১১ শতাংশ) পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। অন্যান্য কারণে মারা গেছেন ২৭ জন (৪ শতাংশ)।

কোন বিভাগে কত নিহত হয়েছেন- নিহত ৮৭৫ জনের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক ঢাকা বিভাগে ৫৪০ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ৯১ জন, খুলনায় ৮১ জন, রাজশাহীতে ৬৪ জন, ময়মনসিংহে ৩৮ জন, রংপুরে ২৯ জন, সিলেটে ২০ জন এবং বরিশালে ১৩ জন নিহত হয়েছেন।

এইচআরএসএসের প্রতিবেদনে নিহত ব্যক্তিদের একাংশের বয়স, পেশা এবং মৃত্যুর কারণও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ১৬ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত ৩২৭ জন এবং ৪ আগস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (অনেকে সরকার পতন পরবর্তী সময়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরে মারা যান) ৫৪৮ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৫২ শতাংশই শিক্ষার্থী। নিহতদের মধ্যে ৭৭ শতাংশেরই মৃত্যু হয়েছে গুলিতে। নিহতদের ৫৩ শতাংশই ১৯ থেকে ৩০ বছর বয়স।

এইচআরএসএস জানায়, নিহত ৮৭৫ জনের মধ্যে ৭৪৩ জনের নাম জানা গেছে। তাদের মধ্যে শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী, সাংবাদিক, পেশাজীবী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, শিশু ও নারীসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সমর্থক আছেন। আন্দোলনে কমপক্ষে ১০৭ জন শিশু, ৬ জন সাংবাদিক, ৫১ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং ১৩ জন নারী ও মেয়ে শিশু নিহত হয়েছেন।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর সারাদেশে থানা (পাঁচ শতাধিক), সরকারি স্থাপনা এবং সংখ্যালঘুদের স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।

নিহত ৮৭৫ জনের মধ্যে ৬১৯ জনের বয়স সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করেছে এইচআরএসএস। এই ৬১৯ জনের মধ্যে ১০৭ জন শিশু (১৮ বছরের কম বয়সী) রয়েছে। এ ছাড়া ১৯ থেকে ৩০ বছর বয়সী বা তরুণ ৩২৭ (৫৩ শতাংশ) জন, ৩১ থেকে ৫০ বছর বয়সী বা মধ্যবয়সী ১৫৮ (২৬ শতাংশ) জন এবং ৫০ বছরের বেশি বয়সী ২৭ জন (৪ শতাংশ) বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ ৬১৯ জনের মধ্যে ৭০ শতাংশেরই বয়স ৩০ বছরের মধ্যে।

এ ছাড়া নিহতদের মধ্যে ৩৫২ জনের পেশা সম্পর্কে তথ্য পেয়েছে এইচআরএসএস। এর মধ্যে শিক্ষার্থী ১৮৪ জন (৫২ শতাংশ), শ্রমজীবী ৭০ জন (২০ শতাংশ), আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ৫১ জন (৫ শতাংশ)।

সংবাদটি শেয়ার করুন :

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত