প্রতিদিন ডেস্কঃ
‘গুম ও মানবতাবিরোধী অপরাধে’ জড়ানোর অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) অভিযোগপত্রে নাম আসা সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৫ জনকে ঢাকায় সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জন কর্মরত ও একজন অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে (এলপিআর) থাকা কর্মকর্তা। নোটিস করার পরও একজন কর্মকর্তা সাড়া দেননি। তবে সেনা সদর বলছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময়ই সংবিধান এবং প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
ন্যায়বিচার বা ইনসাফের প্রশ্নে সেনাবাহিনী আপসহীন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে সেনা আইনের সঙ্গে মুখোমুখি দাঁড় না করানোর অনুরোধ জানিয়েছে রাষ্ট্রের প্রধান এই নিরাপত্তা বাহিনী।
গতকাল ঢাকা সেনানিবাসের স্টাফ রোড মেসের হলরুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সেনা কর্মকর্তাদের হেফাজতে রাখা হয়েছে ‘আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে’ এবং ‘প্রয়োজন অনুযায়ী’ তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে ইতোমধ্যে তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিরোধীমতের লোকদের গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলায় প্রসিকিউশনের দেওয়া আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়ে গত বুধবার ৩০ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর পরিপ্রেক্ষিতেই গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে বাহিনীর অবস্থান স্পষ্ট করল সেনাবাহিনী।
মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান বলেন, গত ৮ অক্টোবর আইসিটিতে প্রথম দুটো চার্জশিট জমা পড়ে।
এরপর তৃতীয় আরেকটা চার্জশিট জমা পড়ে। বেলা ১১টা থেকে ১টার মধ্যে আমরা টিভি স্ক্রলের মাধ্যমে জানতে পেরেছি চার্জশিট জমা পড়েছে এবং ট্রাইব্যুনাল তা গ্রহণ করেছেন। চার্জশিটগুলোর মধ্যে একটা ছিল গুমসংক্রান্ত। যারা তখন ডিজিএফআইয়ে কর্মরত ছিলেন তাদের একটা বড় অংশের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ। আরেকটা ছিল র্যাবের টিএফআই সেল নিয়ে।
অন্যটা ছিল ৪-৫ আগস্টের রামপুরার ঘটনা নিয়ে। এরপর সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়ে গেল।
তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা অভিযোগপত্রের বিষয়টি অবগত হয়েছি। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো চার্জশিট কিংবা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কোনো কপি আমরা পাইনি। আমরা জেনেছি, চার্জশিটে প্রায় ২৫ জন সেনা কর্মকর্তার নাম এসেছে। এর মধ্যে অবসরে আছেন ৯ জন কর্মকর্তা, এলপিআরে আছেন ১ জন কর্মকর্তা ও কর্মরত আছেন ১৫ জন।
সেনাবাহিনীও চায় গুম, খুনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের সঠিক বিচার হোক উল্লেখ করে মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ন্যায়বিচার বা ইনসাফের প্রশ্নে আপসহীন। বিভিন্ন মাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগপত্রের বিষয়টি অবহিত হবার পরপরই ১৫ জন কর্মকর্তাকে আমরা আমাদের হেফাজতে নিয়েছি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ায় স্বপ্রণোদিত হয়ে এই কর্মকর্তাদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আদেশ দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, গত ৮ অক্টোবর কর্মরত ১৫ ও এলপিআরে থাকা একজন সেনা কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে আসার জন্য একটা আদেশ সংযুক্তি করে পাঠানো হয়। তারা ৯ অক্টোবরই ঢাকা সেনানিবাসে সেনা হেফাজতে আসেন। যদিও মেজর জেনারেল কবির নামে একজন সেনা কর্মকর্তা এখনো পর্যন্ত সাড়া দেননি। তার বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। তবে এখন পর্যন্ত তথ্য হলো, তার স্ত্রী বলেছেন ৮ অক্টোবর সকালেই তিনি ঘর থেকে বের হয়েছিলেন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার জন্য। এরপর থেকে তার কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নিয়ম অনুযায়ী তাকে ‘এডব্লিউওএল’ (ইলিগ্যাল এবসেন্ট) হিসেবে ঘোষণা করি। একই সঙ্গে স্থলবন্দর, বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে যেন তিনি দেশত্যাগ করতে না পারেন সেজন্য ডিজিএফআই, এনএসআই ও বিজিবিকে অবহিত করা হয়েছে। তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায়ও আমরা লোক পাঠিয়েছি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে চার্জশিটের কপি পেলে আমরা অভিযুক্তদের কার কী অপরাধ তা খতিয়ে দেখব। পাশাপাশি ওই সেনা কর্মকর্তাদের বিচার প্রক্রিয়া কীভাবে সম্পন্ন হবে আমরা তাদের কাছ থেকে মতামত বা বক্তব্য চাইব।
জানা গেছে, র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে আটকে রেখে নির্যাতনের মামলায় ১৭ জন এবং জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) বন্দি রেখে নির্যাতনের মামলায় ১৩ জন আসামি। দুই মামলাতেই প্রধান আসামি করা হয়েছে জুলাই গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তার প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচ মহাপরিচালকের নাম রয়েছে আইসিটির আসামি তালিকায়।