আলী তকি খান,কুলাউড়া প্রতিনিধিঃ
জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী একজন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী, ধান গবেষক ও লেখক। আধুনিক জীববিজ্ঞানের প্রথম সারির গবেষকদের একজন। তিনি বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের কানিহাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় বসবাস করছেন।
ড. আবেদ চৌধুরী উচ্চশিক্ষা অর্জন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে, যুক্তরাষ্ট্রের অরিগন স্টেট ইনিস্টিটিউট অফ মলিকুলার বায়োলজি এবং ওয়াশিংটন স্টেটের ফ্রেড হাচিনসন ক্যান্সার রিসার্চ ইনিস্টিটিউটে।
১৯৮৩ সালে পিএইচডি গবেষণাকালে তিনি রেকডি নামক জেনেটিক রিকম্বিনেশনের একটি নতুন জিন আবিষ্কার করেন যা নিয়ে আশির দশকে আমেরিকা ও ইউরোপে ব্যাপক গবেষণা হয়। অযৌন বীজ উৎপাদন (এফআইএস) সংক্রান্ত তিনটি নতুন জিন আবিষ্কার করেন, যার মাধ্যমে এই জিনবিশিষ্ট মিউটেন্ট নিষেক ছাড়াই আংশিক বীজ উৎপাদনে সক্ষম হয়। তার এই আবিষ্কার এপোমিক্সিসের সূচনা করেছে যার মাধ্যমে পিতৃবিহীন বীজ উৎপাদন সম্ভব হয়। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিজ্ঞান সংস্থায় বিজ্ঞানীর সমন্বয়ে গঠিত গবেষকদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
এযাবৎ তার সফল গবেষণা পঞ্চব্রীহি ধান। সম্প্রতি এই অভাবনীয় সাফল্য ঘটে গেছে বাংলাদেশে। জিনবিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী একটি নতুন জাতের ধানগাছ উদ্ভাবন করেছেন, যেটি একবার রোপণে পাঁচবার ধান দেবে ভিন্ন ভিন্ন মৌসুমে। তার উদ্ভাবিত এই ধানগাছের নাম দিয়েছেন ‘পঞ্চব্রীহি’। পঞ্চ মানে ‘পাঁচ’ আর ব্রীহি মানে ‘ধান’।
জিনবিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী ধান গাছের দ্বিতীয় জন্ম নিয়ে দীর্ঘ প্রায় ২০ বছরের অধিক সময় ধরে গবেষণা করেন। তিনি চেয়েছিলেন আম-কাঁঠালের গাছ যেমন দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে, ঠিক তেমনই ধানগাছগুলো দীর্ঘআয়ু পাক। দিনরাত কাজ করে যান ২০ প্রকারের ভিন্ন জাতের ধানগাছ নিয়ে। প্রথমে নতুন ধানের শিষ হয়, এমন ভিন্ন জাতের ১২টি ধানবীজ সংগ্রহ করেন। গেল কয়েক বছর ধরে এই ১২ ধরনের ধানের জাতগুলো চাষ করে তিনি নিজে পর্যবেক্ষণ করেন। যেখানে দেখা যায় নিয়মিতভাবে দ্বিতীয়বার ফলন দিচ্ছে এই ধানগুলো। অতঃপর তিনি একই গাছে তৃতীয়বার ফলনের গবেষণা শুরু করেন এবং তাতেও সফল হন। কিন্তু সেগুলোর মধ্যে চারটি জাত ছাড়া অন্যগুলো চতুর্থবার ফলনের পর ধ্বংস হয়ে যায়। এই ৪ জাতের ধানের ওপর আবারও ১০ বছর ধরে গবেষণা চালান বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী।
কৃষির আধুনিকায়নে পঞ্চব্রীহি ধান দেশের কৃষকদের জন্য একটি আশার বিষয়। তার এই গবেষণাটি অতুলনীয় যা সামাজিক মাধ্যমে আমার দৃষ্টকটু হয়েছে। প্রবাসে থাকলেও দেশের ধানের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনে কাজ করছেন তিনি। নিজের উদ্ভাবিত জাতের ধান উৎপাদনে জন্মস্থান কানিহাটি গ্রামের পারিবারিক জমিতে গড়ে তুলেছেন খামার। প্রথমবারের মতো একই গাছে এক বছরে পাঁচবার ফলন এসেছে।