বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৫৭ পূর্বাহ্ন
প্রতিদিন ডেস্কঃ
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। সোমবার এ তালিকা প্রকাশের পর গতকালই প্রার্থীরা নির্বাচনি প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। এদিকে বাকি ৬৩টি আসন ফাঁকা রেখেছে বিএনপি। এসব আসন নিয়ে চলছে নানা হিসাবনিকাশ।
এ তালিকার বেশির ভাগ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন পরীক্ষিত জোটভুক্ত দলের শরিক নেতারা। যেসব রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির পাশে ছিল, এমনকি ৫ আগস্টের পরও অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে সেই দলগুলোর কয়েকজন শীর্ষ নেতার জন্য বেশ কিছু আসন ফাঁকা রেখেছে দলটি। এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে বৃহৎ জোট গঠনে তৎপর বিএনপি। পর্দার আড়ালে চলছে আলোচনা।
যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত থাকা মিত্র দল ছাড়াও আলোচিত রাজনৈতিক দল এ জোটে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এ জোট গঠন হলে পালটে যেতে পারে মনোনয়নের হিসাবনিকাশ।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যারা যুগপৎ আন্দোলন করেছেন তারা যেসব আসনে প্রার্থী দিতে চান সেখানে দেওয়ায় প্রার্থী দেইনি। তারা কোন কোন আসনে প্রার্থী দেবেন তা আমাদের জানাবেন।
পরে সমন্বয় করা হবে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির নেতৃত্বে একটি বৃহৎ জোট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এতে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল ও জোট ছাড়াও যুগপৎ-এর বাইরে হাসিনা সরকারবিরোধী মনোভাবাপন্ন দলগুলোর সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। এনসিপি প্রসঙ্গে বলেন, দলটির সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক যোগাযোগ আছে। তবে জোটবদ্ধ হব কি হব না, তারা হবে কি হবে না-সেটি রাজনীতির মাঠে; কোনো কিছুই আগে থেকে বলে দেওয়া যায় না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এলডিপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, গণঅধিকার পরিষদ, গণফোরাম, ১২ দলীয় জোট, সমমনা জোট ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের জন্য আসন ফাঁকা রেখেছে বিএনপি। বিএনপির সমর্থন পাওয়ার ক্ষেত্রে যারা অগ্রাধিকার পেতে পারেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদের ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি চট্টগ্রাম-১৪ আসনে বিএনপির সমর্থন পেতে পারেন। ওই আসনে কাউকে মনোনয়ন দেয়নি বিএনপি। বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
এ আসনে কাউকে মনোনয়ন দেয়নি বিএনপি। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর তিনি পটুয়াখালী-৩ আসনে সমর্থন পেতে পারেন। দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান নির্বাচন করবেন ঝিনাইদহ-২ থেকে। এ আসনেও বিএনপি প্রার্থী দেয়নি। লক্ষ্মীপুর-১ আসনে সমর্থন পেতে পারেন বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র সাহাদাত হোসেন সেলিম।
এ আসনেও বিএনপি কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে লড়বেন জেএসডির আ স ম আবদুর রবের স্ত্রী তানিয়া রব। এ আসনেও প্রার্থী দেয়নি বিএনপি। ঢাকা-১৭ আসন থেকে নির্বাচন করবেন বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ। আর ববি হাজ্জাজ নির্বাচন করবেন ঢাকা-১৩ থেকে। এ দুটি আসনে বিএনপি কোনো প্রার্থী দেয়নি। ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। এ আসনে বিএনপি কাউকে মনোনয়ন দেয়নি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি ওই নির্বাচনি এলাকায় জনসংযোগও করছেন। এ আসনটিতেও কাউকে মনোনয়ন দেয়নি দলটি। নড়াইল-২ আসন থেকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) সভাপতি ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ মনোনয়ন পেতে পারেন। এই আসনটিও ফাঁকা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া জোটের আরও অনেক নেতার আসন ফাঁকা রয়েছে। সেখানে ওইসব নেতাকে সমর্থন দেওয়া হতে পারে। এর বাইরেও বেশ কিছু আসন ফাঁকা রয়েছে সেখান থেকে জোট শরিক কিংবা বিএনপির নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে।
এদিকে গণ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির সঙ্গে বিএনপির নির্বাচনি জোট বা কোনো আসন সমঝোতা হয় কি না, এ নিয়ে আগ্রহ রয়েছে রাজনৈতিক মহলে। এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, বিএনপির সঙ্গে জোটবন্ধ হওয়ার বিষয়ে দলের ভিতরে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি। জুলাই জাতীয় সনদ নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে তার সমাধানের পর এ বিষয়ে আলোচনা শুরু হবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, জোট গঠনের আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে মাত্র। দেখা যাক সেটি কীভাবে গঠিত হয়। তবে আমরা বিএনপির সঙ্গে শুরু থেকেই আছি।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আমরা চাইব বিএনপির সঙ্গে বোঝাপড়া করার জন্য। গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে অন্য এক আলাপ-আলোচনা চলছে। সবার সঙ্গেই আমরা কথাবার্তা বলব।
১২ দলীয় জোটের প্রধান জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, বিএনপির সঙ্গে আমরা যুগপৎ আন্দোলনে ছিলাম। আগামী নির্বাচনেও একসঙ্গে অংশগ্রহণ করব। জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের প্রধান এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে আমাদের জোট ছিল। ভবিষ্যতেও যে কোনো মেরূকরণে বিএনপির সঙ্গে থাকব।
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান জানান, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি যে জোট করতে যাচ্ছে, তার সঙ্গে তাদের দল রয়েছে।
গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী বলেন, বিএনপির নেতৃত্বে যে নির্বাচনি জোট হতে যাচ্ছে, তাতে আমরা আছি। এরই মধ্যে আমরা সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকাও জমা দিয়েছি তাদের কাছে।