শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৪৭ পূর্বাহ্ন
আরমান হোসেন খানঃ
ঢাকা জেলা অন্তর্গত ধামরাই উপজেলার কুশুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মো. নুরুজ্জামান প্রকল্পের বরাদ্দ ৬০ লাখ টাকা নিয়ে চলে গেছেন আত্মগোপনে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার তথ্যমতে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থ বছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের মধ্যে বিভিন্ন খাত থেকে ২৫টি প্রকল্পের মাধ্যমে ৫৮ লাখ টাকা, ৩ মেট্রিক টন চাল ও ২ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ নিয়েছেন চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান।
গত আড়াই বছরে ইউনিয়ন পরিষদের সীমানার অভ্যন্তরে ফুল বাগান পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ, মাটি ভরাট, দেয়াল নির্মাণসহ ২৫টি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৬০ লাখ টাকা সরকারি দপ্তর থেকে বরাদ্দ নিয়েছেন বলে অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তিনি দুইজন ইউপি সদস্যকে সাথে নিয়ে এমন দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার তথ্যমতে জানা গেছে, ‘কুশুরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ’ বাবদ (২০২১-২২ অর্থবছর) ২ লাখ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ‘কুশুরা ইউনিয়ন পরিষদ ও ভূমি অফিসের উত্তর পার্শ্বস্থ্য অবশিষ্ট ১৭ মিটার বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ’ বাবদ ২ লাখ টাকা এবং একই উৎস থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে কুশুরা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে চা উঠান ও ফুল বাগানের দেয়াল নির্মাণ বাবদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, কুশুরা ইউনিয়ন পরিষদ ক্যাম্পাসে ফলজ, ঔষধি ও ফুল বাগানের পরিচর্যা রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণ বাবদ ১ লাখ টাকা, কুশুরা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে শহীদ মিনার নির্মাণ বাবদ ৬ লাখ টাকা, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে কুশুরা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে শহীদ মিনারের অবশিষ্ট নির্মাণকাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্পের বিপরীতে ৫ লাখ টাকা, কুশুরা ইউনিয়ন পরিষদের ঔষধি, ফলজ, ফুলের চারা, ফুল ও ফল বাগানের পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষন প্রকল্পের বিপরীতে ২ লাখ টাকা, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপি অর্থের উৎস থেকে কুশুরা ইউনিয়ন পরিষদের ভবনের হলরুম ও বারান্দায় টাইলসকরণ প্রকল্পে ৪ লাখ টাকা, ‘কুশুরা ইউনিয়ন পরিষদের অভ্যন্তরীন পাকারাস্তা হতে নির্মাণাধীন শহীদ মিনার হয়ে ভূমি অফিস পর্যন্ত ঢালাই রাস্তা নির্মাণ ও কুশুরা মাছ বাজারের অস্থায়ী সেড নির্মাণ’ প্রকল্পের ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে ‘কুশুরা ইউনিয়ন পরিষদ ক্যাম্পাসের সামনের অংশে পার্কিং টাইলস ও বারান্দার সামনের অংশের ফ্লোর টাইলসকরণ’ প্রকল্পের বিপরীতে ৫ লাখ টাকা, ‘কুশুরা ইউনিয়ন পরিষদ ও ভূমি অফিসের ক্যাম্পাসে ফলজ, বনজ, ওষধী, বৃক্ষ রোপণ এবং সৌন্দর্যবর্ধক ফুলের চারা রোপণ’ প্রকল্পের বিপরীতে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ২ লাখ টাকা, ‘কুশুরা ইউনিয়ন পরিষদের ২য় ও ৩য় তলায় ওয়েদার কোড ও ডিসটেম্পারকরণ’ প্রকল্পের বিপরীতে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ নিয়েছেন চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান।
এছাড়া ২০২১-২২ অর্থ বছরে কাবিটায় দ্বিতীয় পর্যায় এমপি কোটায় প্রকল্পে ৩ লাখ টাকা। একই অর্থ বছরে টিআর কর্মসূচির আওতায় ‘কুশুরা ইউনিয়ন পরিষদ উন্নয়ন (৩য় পর্যায় সাধারণ)’ বাবদ ৭০ হাজার টাকা, ‘কাবিটা কর্মসূচির আওতায় ‘কুশুরা ইউনিয়ন পরিষদ ক্যাম্পাসে পূর্ব অংশে মাটি ভরাট (২য় পর্যায় সাধারণ)’ বাবদ ৯৬ হাজার টাকা, কাবিখা কর্মসূচির আওতায় ‘কুশুরা ইউনিয়ন পরিষদ উত্তর অংশে মাটি ভরাট (২য় পর্যায়ে সাধারণ)’ বাবদ ১ টন চাল বরাদ্দ নিয়েছেন চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান।
এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থ বছরে টিআর কর্মসূচি আওতায় ‘কুশুরা ইউনিয়ন পরিষদ উন্নয়ন (১ম পর্যায়)’ প্রকল্পের ১ লাখ টাকা, কাবিটায় ‘কুশুরা ইউনিয়ন পরিষদের উত্তর ও দক্ষিণ পাশ্বে গর্ত ভরাট (১ম পর্যায় সাধারণ) ২ লাখ টাকা, কাবিটায় কর্মসূচির আওতায় ‘কুশুরা ইউনিয়ন পরিষদ ক্যাম্পাস ও ভূমি অফিসের ভরাট (১ম পর্যায় এমপির কোটায়) ৩ লাখ টাকা, টিআর কর্মসূচির আওতায় ‘কুশুরা ইউনিয়ন পরিষদ ভূমি অফিস ও প্রাঙ্গণ উন্নয়ন (২য় পর্যায় এমপির কোটায়)’ বাবদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় ‘কুশুরা ইউনিয়ন পরিষদ ভূমি অফিস ও পূর্ব পাশ ক্যাম্পাসে মাটি ভরাট (২য় পর্যায় সাধারণ)’ বাবদ ২ লাখ টাকা, টিআর কর্মসূচির আওতায় ‘কুশুরা ইউনিয়ন পরিষদ রেস্ট হাউজের আসবাবপত্র ক্রয় (২য় পর্যায় সাধারণ)’ বাবদ ১ লাখ ১১ হাজার টাকা বরাদ্দ নিয়েছেন তিনি। একই কর্মসূচির আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ‘কুশুরা ইউনিয়ন পরিষদ ও ভূমি অফিস প্রাঙ্গণে অতি বর্ষণে ভেঙে পড়া জায়গায় মাটি ভরাট (১ পর্যায় সাধারণ ) ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা বরাদ্দ নিয়েছেন চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান।
এ বিষয়ে ওই ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য বলেন, চেয়ারম্যান তার নিজের ইচ্ছামতো কাজ করেছেন। কোনো হিসাব দিতেন না।
এ বিষয়ে জানতে সেই চেয়ারম্যান নুরুজ্জামানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। কারণ ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন পর্যন্ত তিনি ইউনিয়ন পরিষদে না বসে আত্মগোপনে রয়েছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোমিনুল হক বলেন, কুশুরা ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে পরিষদের অভ্যন্তরে বার বার প্রকল্প নিয়েছেন। প্রকল্প যাচাইয়ে গেলেও তেমন গুরুত্ব দিতেন না তিনি।