শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:০০ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞাপন :
কোন পণ্য বা সেবার জন্য বিজ্ঞাপন তৈরি করতে চান? আপনি যদি বিজ্ঞাপন তৈরি করতে আগ্রহী হন সুযোগ আছে জয়েন করুন।

তুলে নেওয়ার ১৬ মাস পর বাড়ি ফিরলো ধামরাইয়ের যুবক

আরমান হোসেন খান,চীফ রিপোর্টারঃ
ঢাকার ধামরাই থেকে ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট র‍্যাব পরিচয়ে রাতের আঁধারে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় রহমতুল্লাহ নামে এক যুবককে। এর পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। নানা জায়গায় খোঁজাখুঁজির পরও তার কোনো সন্ধান মিলছিল না। তবে পরিবার হাল ছাড়েনি। অবশেষে সেই রহমতুল্লাহর খোঁজ মেলে গত শনিবার।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) পুলিশের সহায়তায় ১৬ মাস পর বাড়ি ফেরে সেই রহমতুল্লাহ। তাকে ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত পরিবার ও এলাকাবাসী।
ভুক্তভোগীর দেওয়া তথ্যমতে- এতদিন ভারতে বন্দী ছিলেন তিনি। এরপর শনিবার তাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ফেরত পাঠানো হয় বাংলাদেশে।
রহমতউল্লাহ ধামরাই উপজেলার গাংগুটিয়া ইউনিয়নের বড়নালাই গ্রামের মৃত আবদুর রবের ছেলে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে রহমতুল্লাহ সবার ছোট। বড় ভাই সৌদিপ্রবাসী। বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। মা ও ভাবির সঙ্গে বাড়িতেই থাকতেন তিনি এবং ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ শিখছিলেন।

তবে কেন, কী কারণে র‌্যাবের পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়– সে ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু বলতে পারছেন না ভুক্তভোগী নিজে ও স্বজনরা।

যেভাবে খোঁজ মিলল রহমতুল্লাহর

পরিবারের সদস্যরা জানান, শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন পান রহমতুল্লাহর বড় ভাই মো. ওবায়দুল্লাহ। অপর প্রান্তের ব্যক্তি নিজেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর থানার রহনপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের এসআই (উপপরিদর্শক) মো. ফজলে বারী পরিচয় দিয়ে রহমতুল্লাহকে পাওয়ার কথা জানান। ওবায়দুল্লাহ খোঁজ নিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হন। এরপর পরিবারের ৪ সদস্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলে যান।

মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, এস আই মো. ফজলে বারীর কল পেয়ে আমরা চাঁপাইনবাবগঞ্জে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে রহমত উল্লাহকে নিয়ে বাসায় আসি। শুরুতে রহমতুল্লাহ আমাকে চিনতে পারছিল না। এখনও খুব বেশি কথা বলতেছে না।
বাড়িতে ফিরেও অনেকটাই চুপচাপ রহমতুল্লাহ। কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। প্রশ্ন করা হলে চুপ থাকছেন। কিছু প্রশ্নের অল্প কথায় জবাব দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ভারতের জেল থিকা বাইর করছে, তারপর বাংলাদেশে নিয়া আসছে। আজকে বাড়ি আসছি।

১৬ মাস কোথায় ছিল রহমতুল্লাহ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর থানার পুলিশ জানায়, থানায় আসার পর রহমতুল্লাহ তাদের জানিয়েছেন, গত বছরের ২৯ আগস্ট নিজ বাড়ি থেকে র‌্যাব তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। এরপর ঢাকায় ৯ মাস চোখ, হাত-পা বেঁধে আটকে রাখা হয়। যেখানে তাকে রাখা হয়েছিল, এর আশপাশে বিমান ওঠানামা করত। শুধু খাওয়ার সময় চোখ খোলা রাখা হতো। খাওয়া শেষ হলে আবার তার চোখ বেঁধে ফেলা হতো। এভাবে ৯ মাসের মতো রাখার পর গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন হায়েস গাড়িতে করে তাকে যশোরের বেনাপোল সীমান্তে নিয়ে যায়। সীমান্ত পার করে রহমত উল্লাহকে ভারতের সীমানায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। দু-তিন দিন ভারতে ঘোরার পর ভারতের পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
রহমত উল্লাহ পুলিশকে জানিয়েছেন, অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতে তাকে একটি জেলে রাখা হয়। সেখানে ৬ মাসের সাজা হয়। এ ছাড়া ১ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ২ মাস জেল খাটতে হবে-এমন সাজা হয়। ৭ মাস জেল খাটার পর সর্বশেষ দমদম জেলখানা থেকে গাড়িতে করে সীমান্তে আনা হয়। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে তাকে বাংলাদেশে ‘পুশ ব্যাক’ করা হয়। পরে তিনি গোমস্তাপুর থানায় যান। এরপর থানা-পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পরিবারের তথ্য নেয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন :

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত